আহ, শৈশব।।

2491
0

অনেক বছর আগের কথা। তখন আমি ক্লাস সেভেনে পড়তাম। ছিলাম ক্লাস ক্যাপ্টেন। হঠাৎ একদিন ক্লাসে দেখলাম, নতুন একটা ছেলে ভর্তি হয়েছে। নাম তার শওকাত। যে কিনা দুষ্টের শিরোমণি আর শয়তানের দাদা।

ক্লাসে প্রথম দিন এসেই আরো কয়েকটা শয়তান বন্ধু বানিয়ে নিলো। কিছুদিন পর থেকে শুরু হল তার শয়তানি।

ছেলেদের টিফিন চুরি, মেয়েদের বেণী টেনে দিয়ে আঁচার কেরে নেয়া, ক্লাসের মধ্যে উচ্চ বেসুরা গলায় গান গাওয়া, ওয়াশ রুমে লুকিয়ে লুকিয়ে সিগারেট টানা, কাকের বাসা থেকে ডিম চুরি করে লুকিয়ে লুকিয়ে মেয়েদের গায় মারা ছাড়াও এমন কোনো শয়তানি কাজ নেই যে তারা করতো না।

কেও যদি তাদের বিরুদ্ধে নালিশ দিতো, তাহলে ক্লাস ছুটির পর তাদের আচ্ছা করে ধোলাই দিতো।

আবার ক্লাসের সব ছেলে কে ভাগিনা বলে ডাক তো, যে ছেলে গুলো মোটা ছিলো তাদের বলতো কুমড়া পটাশ, পটলা, গাড্ডু, আর বেশি চিকন্দের বলতো শুঁটকি, কাঠ পেন্সিল। আর মেয়েদের বলতো জানু, ডার্লিং, হাফ টিকেট সহ আরো কিছু আজব আজব নাম। আর রাস্তায় পুলিশ দেখলে ঠোলা ঠোলা বলে চিল্লান দিয়ে দোড় মেরে পালাতো।

আমি যেহেতু ক্লাস কেপ্টেইন ছিলাম, আমার সাথে রেশা রেশি একটু বেশি ছিলো। ক্লাসে দুষ্টামি করলে বোর্ডে বা কাগজে নাম লেখে টিচার কে দিয়ে মার খাওয়াইতাম।

টিচার চলে যাওয়ার পর আমাকে এই করবে সেই করবে বলে অনেক হুমকিই দিতো।

কিন্তু ছুটির পর কিছুই করতো না। কারণ আমার মেঝো ভাইয়াকে তারা ভালো করেই চিনত। আর তখন ভাইয়া রাজনীতি করতেন। এটাও একটা কারন হতে পারে।

যাই হোক, এভাবে চলতে চলতে একদিন ক্লাসে শওকত এর সাথে ভীষন বারা বারি হয়ে যায়। ও আমাকে ধুম ধাম করে চোখে ২ টা ঘুষি মেরে দেয়। আমি কিছুই বলিনি। সুযোগ এর অপেক্ষায় থাকলাম।

প্রথম সাময়িক পরীক্ষার পর টিচার বিজ্ঞান ক্লাসে সবাইকে খাতা দিচ্ছেন, কে কতো পেয়েছে দেখার জন্য, ভুল হলে বলার জন্য। শওকত এর রোল নং ছিল ৪৩. ওর ডাক আসতেই টিচার বললো, এই শওকত টা কে? দাঁড়া তো? তোর চেহারা টা একটু দেখি? কিন্তু আমি দেখলাম, শওকত ঠিকি আছে, কিন্তু সে দারাচ্ছেনা। অন্য ছাত্র রাও বলছেনা ভয়ে।

আমি ওকে দেখিয়ে বললাম, ঐ যে টিচার, ও আছে। টিচার বললো। এইদিকে আয়। টেবিলের নিচে মাথা ঢুকা। মাথা ঢোকানোর পর দেখলাম, টিচার আচ্ছামতো তার পাছায় বেত মেরে লাল করে দিয়েছে।

সে মাইর খেয়ে টিচার এর সামনেই আমাকে হুমকি দিলো, ক্লাস ছুটির পর আমাকে সে দেখে নিবে।

আমার মাথা গেলো গরম হয়ে, টিচার কে এবার সব বলে দিলাম তার আর তার দোস্ত দের কার্গুজারি।

টিচার শওকাত আর তার শয়তান বন্ধুরা টিফিন চুরি করে, মেয়েদের বিনি টেনে দেয়, বোর্ড এর লেখা গুলো হাত দিয়ে মুছে চোখে মুখে লাগিয়ে দেয়।

ছেলেদের কেও কে কুমড়া পটাশ, পটল, গাড্ডু, শুঁটকি, কাঠ পেন্সিল আর মেয়েদের জানু, হাফ টিকেট, ডার্লিং বলে ডাকে। আর মাঝে মাঝে ওয়াশ রুমে সিগারেট টানে। এছাড়া সব ছেলেকে ভাগিনা বলে ডাকে।

টিচার তা শুনে সবাইকে জিজ্ঞাসা করলো সত্যি কিনা। প্রথমে ভয়ে কেও কোনো কথা বল্লনা, পরে টিচারের ধমকে সবাই আমার কথায় সায় দিয়ে বলল, হে টিচার সত্যি।

টিচার তার দোস্ত দেরো ডেকে সামনে এনে বলল, তোদের আজ পিটিয়ে কি করি দেখ, বেয়াদপ ছেলে। তোরা সবাই দেখ, এই পাজি ছেলে খাতায় কি লিখসে। লিখসে, এইসব প্রশ্ন যে করছে, আমি তার মেয়ে রে বিয়া করি, যে শালা প্রশ্ন করসে, সে শালা নিজে কখনো পরসে? নিশ্চিত গাজা খাইয়া প্রশ্ন বানাইছে।

এটা বলে টিচার তখন আরো গরম হয়ে গেল, আচ্ছা করে সব গুলো কে পিটিয়ে, কান ধরে ১০০বার উঠ বস করিয়ে তারপর বেঞ্চে বসতে বলল।

ক্লাস শেষে তারা আমাকে আর কিছুই করেনি। হয়তো আমার মেঝো ভাইয়ার ভয়েও হতে পারে।

ঐ মাইর খাওয়ার পর থেকে তারা অনেকটা সোজা হয়ে গেলো। ধিরে ধিরে শওকাত আমার একটা ভালো বন্ধু হয়ে গেলো। এখন সে সুইডেন থাকে। মাঝে মাঝে কল দিয়ে অনেক্ষন কথা বলে। আর অতীত এর কথা গুলো মনে করে করে হাঁসে।

মাঝে মাঝে সে বলে, ঐ মাইরটা খাওয়াতে তার ভালই হয়েছে। নাহলে সে নাকি দুষ্টের শিরোমণিই থেকে যেত।
ওহ, সে এখন আর সিগারেট টানেনা। মাইর খাওয়ার পর যে ছেড়ে দিয়েছে, এর পর থেকে আর কোনো দিনও সে সিগারেট টানেনি।
,
এখন সে ভাল স্বামী হয়েছে। বিদেশ থেকে একেবারে চলে এসে ব্যবসা করছে। দুইটা কিউট বাচ্চার বাবা। ভালই চলছে তার দিন।
,
এখনো আমি মাঝে মাঝে জব শেষ করে তার সাথে আড্ডা দেই। আর কিউট বাচ্চা দুটোর গাল টেনে দিয়ে আসি। ভাবি কফি আর নূডুলস দিয়ে যায় বারান্দায়। তার থেকে শুনেছিল নূডুলস খুব প্রিয় আমার। সব সাবাড় করার পর কফির সাথে যখন সিগারেট ধরাই তখন সে জ্বলন্ত সিগারেটের দিকে তাকিয়ে বলে, তুই ভবিষ্যতে এরকম সিগারেট খোর হলে জানলে তোকেও লাইনে নিয়ে আসতাম। এটা বলে দুই জনেই হা হা করে হাসতাম।
,
হঠাত আনমনে ভিতরে খেলে যায়। ইস থুক্কু বলে যদি আবার সব শুরু করা যেত?

লিখাঃ রিহান আহমেদ।