দৈনন্দিন ব্যস্ত জীবনের মাঝে একটু অবসরে ডুব দিতে কার না ভালো লাগে! আর তা যদি হয় বিদেশ ভ্রমণ তাহলে তো কথাই নেই। তবে খরচ, সময়, পাসপোর্ট, দুরত্ব ইত্যাদির কথা বিবেচনা করে অনেক সময় বিদেশে ঘুরতে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।
তবে বর্তমানে বেশ কিছু সুন্দর ট্র্যাভেল ডেস্টিনেশন আছেন সেখানে আপনি পরিবার ও বন্ধুবান্ধবসহ সহজেই ঘুরে আসতে পারবেন। আজকের আয়োজনে এমনই ১০টি দেশ নিয়ে কথা হবে যেগুলোতে অল্প খরচে বেশ সহজে ঘুরে আসা যাবে।
ভুটান
ভুটান হিমালয়ের কেন্দ্রে অবস্থিত। অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে ভরপুর একটি দেশ। এটিকে মূলত সুখের রাজ্য হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এর অসাধারণ সৌন্দর্যের মধ্যে রয়েছে তুষারে আবৃত পাহাড়, কারুকাজে সমৃদ্ধ বৌদ্ধ মন্দিরসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
ভুটানের জনপ্রিয় ও দর্শনীয় স্থানগুলো হচ্ছে-ফোবজিকা ভ্যালি, ওয়াংদিং ফোদরাং, চেলে লা পাস, পুনাখা, বুমথাং, পারো এবং থিম্পু। ভুটানে সাধারণ মানের হোটেলে থাকতে চাইলে প্রতি রাতের জন্য গুণতে হবে ৪০-৬৫ মার্কিন ডলার।
মালয়েশিয়া
বিদেশ ভ্রমণের জন্যে যদি একটি ছোট্ট তালিকা করা হয় তবে ভ্রমণপিয়াসু পর্যটকদের পছন্দের প্রথম তিন দেশের মধ্যেই থাকবে মালয়েশিয়ার নাম। বিগত কয়েক বছরে রেকর্ড সংখ্যক টুরিস্ট মালয়েশিয়া ভ্রমণ করেছে। মালয়েশিয়ায় রয়েছে বেশ কিছু জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট। এর মধ্যে বেশ উল্লেখযোগ্য হলো-পেট্রোনাস টুইনটাওয়ার। এটি মূলত কুয়ালামাপুরে অবস্হিত।
অনেকের মতে, মালয়েশিয়া ভ্রমণ করে যদি টুইনটাওয়ারের সামনে ছবিই না তোলা হয় তবে ভ্রমণই বৃথা। এছাড়াও আরও নানান উল্লেখযোগ্য স্থানের মধ্যে রয়েছে-পেনং, টিউম্যান ইত্যাদি। মালয়েশিয়াতে মোটামুটি মানের হোটেলে থাকতে হলে প্রতি রাতে গুণতে হবে ৩২.০৪ মার্কিন ডলার হতে ৩৬.৬২ ডলারের মতোন।
ইন্দোনেশিয়া
বলা হয় কারোর যদি জীবনে মিলিয়নিয়ার হওয়ার শখ থাকে তবে ঘুরে আসতে হবে ইন্দোনেশিয়া। কারণ ৫.৪৯ মার্কিন ডলার হলো ইন্দোনেশিয়ার এক লক্ষ রুপিয়াহর সমান। কেমন লাগবে শুনতে যদি ডিনার শেষ করে দেখে বিল এসেছে এক লক্ষ রুপিয়াহ?
উলুন দানু টেম্পল, কিন্তামানি ভিলেজ, বালি এসব ইন্দোনেশিয়ার অত্যধিক জনপ্রিয় স্থান বলে বিবেচনা করা হয়। তবে সবচাইতে মজার ব্যাপার হচ্ছে এই দেশ ভ্রমণ করার জন্যে ভিসা নিয়ে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। কেননা যদি রিটার্ন টিকেট থাকে তবে এয়ারপোর্টেই পেয়ে যাবেন এনএরাইভাল ভিসা।
ফিলিপাইন
ঘুরতে ভালোবাসে অথচ ফিলিপাইনের নাম শুনেনি এমন মানুষ কম পাওয়া যাবে। এর আকর্ষণীয় সমুদ্র, সমু্দ্র তীরের সাদা বালু একে পরিণত করেছে এশিয়ার অন্যতম ট্রাভেল ডেসটিনেশন হিসেবে। এদেশের টাকার মান অন্য অনেক দেশের থেকে কম। এক পেসো সমান ০.০১৫ মার্কিন ডলার। ফিলিপাইনে প্রতিরাতে হোটেল খরচ হিসেবে গুণতে হবে ১৮.৩১ মার্কিন ডলার হতে ২২.৮৯ মাকিন ডলার।
তবে ডর্ম কিংবা হোস্টেলে বিল আরও কম আসবে। থাকার খরচ অপেক্ষা এই দেশে খাবার খরচ তুলনামূলক কম। প্লেটভর্তি স্ট্রিট ফুড পাওয়া যায় মাত্র তিন থেকে চার মার্কিন ডলারে। ফিলিপাইনে ম্যানিলা ও বোরোক্যা এই দুইটি জায়গা ঘুরে বেরানোর স্থান হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া খুবই কম খরচে ডাইভিং শেখা যায় এখানে। এর জন্যে গুণতে হবে মাত্র ১৩.৭৩ মার্কিন ডলার থেকে ১৮.৩১ ডলার।
ভিয়েতনাম
কম খরচে ঘুরে বেরানোর জন্য এশিয়ার আরেকটি জনপ্রিয় দেশ হলো ভিয়েতনাম। ইদানীংকালে বিভিন্ন দেশ হতে প্রচুর ভ্রমণপিয়াসু মানুষ এই দেশ ভ্রমণ করছে। ভিয়েতনামের জনপ্রিয় স্থানগুলো হলো-হোই অ্যান, মার্বেল মাউন্টেন, ডা ন্যাং ইত্যাদি। এছাড়া লিস্টে ফু কুয়োক-এর নামও রাখতে পারেন, যা ভিয়েতনামের একটি জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত। ভিয়েতনামে থাকা ও খাওয়া খরচ বেশ সাশ্রয়ী।
নেপাল
হিমালয়ের কোলে অবস্থিত নেপাল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর একটি দেশ। যদি শহরের কোলাহল ও যান্ত্রিকতা থেকে দূরে শান্ত পরিবেশে নিজের পরিবারের সাথে ছুটি কাটাতে চাইলে নেপাল অন্যতম সেরা একটি গন্তব্য হতে পারে। পোখারা, লুম্বিনী, নাগরকোট ইত্যাদি নেপালের জনপ্রিয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। এছাড়া নেপালে রয়েছে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ক্যাম্পিংয়ের সুবিধাও।
শ্রীলঙ্কা
বিদেশে গিয়ে যদি তাদের স্থানীয় যানবাহনে চড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নতুন দেশ উপভোগ করতে চান তবে শ্রীলঙ্কা হতে পারে উপযুক্ত দেশ। এখানে যানবাহন অত্যন্ত সহজলভ্য, তবে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট আরও বেশি সহজলভ্য। এই দেশের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে জেটোয়িং লাইট হাউস, লুনুগঙ্গা, কলম্বো, বেন্টটা, ঊনায়াতুন বিচ টুথ রেলিকের মন্দির বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া সেখানে থাকার জন্যে ব্লু হ্যাভেন গেস্ট হাউস অত্যন্ত নামকরা একটি হোটেল।
কম্বোডিয়া
ইতিহাস আর ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে এমন পর্যটকদের জন্য কম্বোডিয়া আদর্শ একটি জায়গা। প্রাচীনকাল থেকে এই দেশে রাজতন্ত্র বিদ্যমান ছিল। যেহেতু অ্যাঙ্কোর শহরটিতে থাকার মতো হোটেল ব্যবস্থা নেই সেহেতু বেছে হবে সিম রিপ শহরটিকে এবং এখান থেকে ঘুরে বেড়াতে পারেন পুরো শহর। কম্বোডিয়ার জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে সিম রিপ, কে, কিলিং ফিল্ডস, আঙ্কোর ভাট, দ্য বায়ণ, ফনোম পেনহ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
মঙ্গোলিয়া
এটি পূর্ব এশিয়ার একটি রাষ্ট্র যা স্থলবেষ্টিত। এই দেশ মূলত চীন ও রাশিয়ার সীমান্তে অবস্থান করছে। রুশ সীমান্তের কাছে অবস্থান করা এই দেশ পুরাতন ক্ষয়ে যাওয়া পর্বত, অরণ্য, চারণভূমি ইত্যাদির জন্যে পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর বিখ্যাত ভ্রমণ স্থানগুলো হচ্ছে-অর্খন ভ্যালি, ওরগ নূরু, গাচ্ছেন লামা মনেস্ট্রি, খাঙ্গাই পাহাড়। এই দেশে থাকার জন্যে আপনারা বেছে নিতে পারেন দানিস্তা নোমাডস ট্যুর হোস্টেলকে।
বলিভিয়া
এটি দক্ষিণ আমেরিকার একটি দেশ। যেহেতু এই দেশ আন্দেস পর্বতালয় থেকে বেশ উঁচুতে অবস্থিত সেহেতু এই দেশকে পৃথিবীর ছাদ বলা হয়। এই দেশের এক তৃতীয়াংশ জুড়ে আন্দেস পর্বতমালা। তবে সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ হলেও এই দেশটি রাতের অন্ধকারে বেশ ভয়াবহ। তাই এই দেশ ভ্রমণ করার পূর্বে অবশ্যই অবশ্যই পর্যটকদের উচিত বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা।
তবে বিশেষভাবে লা পেজ পর্যটকদের জন্য বেশ বিপজ্জনক হিসেবে বিবেচিত। বলিভিয়ার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সালার দে উয়ূনী, তিতিকাকা লেক, তারাবুকো, লাগুনা কালোরান্দা ইত্যাদি।
Feature Image: Author References: 01. Top Cheap Places to Travel. 02. Cheapest Countries to Travel.